
২৩ আগস্ট পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, ২ অক্টোবর বিমানবন্দরটির আন্তর্জাতিক রুট উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা
কাজ শেষ না করেই চালু হলো কক্সবাজার বিমানবন্দর
- আপলোড সময় : ২৬-০৮-২০২৫ ০৪:৫৬:৩৩ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৬-০৮-২০২৫ ০৪:৫৬:৩৩ অপরাহ্ন


দুই বছর আগে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বেশ তড়িঘড়ি করে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের ‘সফট ওপেনিং’ করেছিল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তখন বলা হয়েছিল, মাস ছয়ের মধ্যে এই টার্মিনাল থেকে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। যদিও এখন পর্যন্ত ওই টার্মিনালের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। ফ্লাইট পরিচালনারও কোনো খবর নেই।
ঠিক একইভাবে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেরও ‘সফট ওপেনিং’ করতে যাচ্ছে বেবিচক। এজন্য তারা আগামী ২ অক্টোবর দিনক্ষণ ঠিক করেছে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য দুটি এয়ারলাইন্সকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। এছাড়া মর্যাদা পেতে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থাকে (আইকাও) চিঠি দিয়েছে বেবিচক। কোনো উড়োজাহাজ সংস্থা আদৌ ফ্লাইট পরিচালনা করবে কি না সেটা নিশ্চিত না হয়েই উদ্বোধন হচ্ছে।
জানা যায়, কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের আরও ১৫ শতাংশ কাজ এখনো বাকি। যে দুটি এয়ারলাইন্সকে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে, তারা সমীক্ষাও ঠিকমতো শুরু করতে পারেনি। এ অবস্থায় ২ অক্টোবর সফট ওপেনিং হলেও ফ্লাইট পরিচালনা অনিশ্চিত।
শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল ও কক্সবাজার বিমানবন্দর প্রকল্পের কাজ শেষ করার আগেই কেন সফট ওপেনিং করা হলো বা হচ্ছে তা নিয়ে খোদ বেবিচকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যেই মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। তাদের একটি পক্ষ জানায়, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনের তিন মাস আগে তথা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ঘটা করে শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালের সফট ওপেনিং করেছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বেবিচকের সংশ্লিষ্টরা জানান, কক্সবাজার অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের উদ্যোগ বাস্তবায়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। নতুন মর্যাদা পাওয়ার পর বিমানবন্দরটির আনুষ্ঠানিক নাম হবে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার। এটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে ২০২১ সালে কাজ শুরু করে বেবিচক। এই প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দরটিতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে আগামী ডিসেম্বরে। আর বিদ্যমান ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট দৈর্ঘ্য থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার ফুটের নতুন রানওয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে।
বেবিচক সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ২ অক্টোবর কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায় বেবিচক। এজন্য আইকাও-এর বিধিবিধান অনুযায়ী এয়ারএসি এআইপি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। ২ অক্টোবর উদ্বোধন করার প্রস্তুতি চলছে। পরে ৮ অক্টোবরের মধ্যে এই বিমানবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল শুরু হতে পারে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের প্রকল্প পরিচালক ইউনূস ভূঁইয়া বলেন, এখন পর্যন্ত বিমানবন্দরের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি এক মাসের মধ্যে শেষ এবং ফ্লাইট চালু করা সম্ভব হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইউনূস ভূঁইয়া বলেন, সম্ভব না হলে তো উদ্বোধন বা ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হতো না।
কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় গত ১১ আগস্ট দেশের দুই শীর্ষস্থানীয় বেসামরিক এয়ারলাইন্স বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক রূপান্তর সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি ও বেবিচক বোর্ড সদস্য (এটিএম) গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. নুর-ই-আলম। এয়ারলাইন্সগুলো কক্সবাজার থেকে কোনো ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করছে এবং কোন গন্তব্যে ফ্লাইট চালু করবে, তা লিখিতভাবে জানতে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি বিমান ও ইউএস-বাংলা। সংস্থা দুটি কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনায় আর্থিকভাবে কতটুকু লাভবান হবে সে বিষয়ে সমীক্ষা করা হচ্ছে।
দেশের বড় এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, ফ্লাইটে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কক্সবাজার চলাচলের দূরত্ব মাত্র ৪৫ মিনিটের। এ অবস্থায় কক্সবাজার নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক কোনো রুটে কত সংখ্যক যাত্রী মিলবে সে বিষয়টি মাথায় রেখে ফ্লাইট পরিচালনা নিয়ে কাজ করছে এয়ারলাইন্সগুলো।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এ বি এম রওশন কবীর বলেন, কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় সমীক্ষা চালাচ্ছে বিমান। এ সমীক্ষার চূড়ান্ত প্রতিবেদনের পর ফ্লাইট চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কারণ, কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক রুটের মধ্যে কোনটির চাহিদা বেশি, তা বের করা জরুরি। এছাড়া আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় লাভ-লোকসানেরও হিসাব রয়েছে। একইভাবে ইউএস-বাংলা কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় সমীক্ষা করছে বলে জানা যায়। গত ১৭ আগস্ট কক্সবাজার বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ও রানওয়ের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক। তখন তিনি বলেন, আমরা আশা করছি অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে আংশিকভাবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য এয়ারপোর্টটি প্রস্তুত হবে। এজন্য সরকার এবং আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি। ১৫ শতাংশ কাজ বাকি রেখে কীভাবে আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট শুরু হবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এয়ার ভাইস মার্শাল মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক বলেন, হিসাব-নিকাশে যাচ্ছি না। তবে এটা বলতে পারি অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে আংশিকভাবে ফ্লাইট চালু হতে পারে।
জানতে চাইলে বেবিচক বোর্ড সদস্য (এটিএম) গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. নুর-ই-আলম বলেন, একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উদ্বোধনের জন্য ৫৬ দিন ‘নিড টাইম’ লাগে। এই সময়ের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটিকে জানাতে হবে। এজন্য গত ৭ আগস্ট বেবিচক ওয়েবসাইটে একটি নোটিশ দিয়েছি যে কক্সবাজারকে আমরা একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করবো। সেই হিসেবে অক্টোবরের ২ তারিখ আমাদের টাইমলাইন পড়েছে। এই সময়ের মধ্যে আবার আইকাও সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে। সেটার জন্য আমরা আবেদন করেছি। সার্টিফিকেট পেয়ে গেলে এয়ারপোর্টের সফট ওপেনিংটা হয়ে যাবে।
১৫ শতাংশ কাজ বাকি রেখে কীভাবে কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী পরিবহন করা হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে নুর-ই-আলম বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরে এখন যে প্রকল্পের কাজ হচ্ছে, সেটি সম্প্রসারণ প্রকল্প। এখানে বিদ্যমান রানওয়ের মধ্যে বিমান এবং ইউএস-বাংলার বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজ উড্ডয়ন এবং অবতরণ করছে। এ প্লেনগুলো মধ্যপ্রাচ্য ও থাইল্যান্ডে কিন্তু যাত্রী পরিবহন করছে। এখন বিমানবন্দরের যে টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে একটি অংশ থেকেই আমরা আন্তর্জাতিক অ্যারাইভাল এবং ডিপারচারের কাজ পরিচালনা করবো। সেটার কাজ শেষ করতে সেপ্টেম্বরের ২০ থেকে ২২ তারিখের মধ্যে হয়ে যাবে। তারপর সফট ওপেনিং করবো। প্রথমে ফ্লাইট কমই চলবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে মূল প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ফ্লাইটের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়বে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ